
ব্যথার মধ্য দিয়ে জীবনের খণ্ডচিত্র

প্রদর্শনী
১৯ – ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
লা গ্যালারি, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা
২৬ মিরপুর রোড, ধানমন্ডি; ঢাকা, বাংলাদেশ

সীবিত কোলাজ কি?
প্রাচীন চীনে কাগজ আবিষ্কারের কালে শুরু হওয়া ‘কোলাজ’ নামক শিল্পমাধ্যম গত দুই হাজার বছরে বিচিত্র উপাদান ও তাদের বিচিত্রতর গ্রথনকে আত্মস্থ করে সংস্কৃতি ও সময়ের অবিরাম ধারায় বয়ে চলেছে। বহমানতার এই পরম্পরায় অনন্য এক শিল্পশৈলীর সূচনা করেন সুরঞ্জনা ভট্টাচার্য্য তাঁর সীবিত কোলাজের মাধ্যমে। সূত্র, বস্ত্র, বর্ণ এবং কথকতার মিশ্রণে রচিত সুরঞ্জনার এই শিল্পকর্মে গ্রথন বা টেক্সচারের মুন্সিয়ানা যেমন আছে, তেমনি আছে বর্ণনার গভীরতা। অনাদিকাল থেকে চলে আসা সীবনশৈলীর সঙ্গে সমসাময়িক শিল্পশৈলীর মিলনে সৃষ্ট কোলাজের এই বিশেষ ধারা, ধরন বা জঁরা স্পর্শ ও দৃশ্য জগতে নতুন ও বিচিত্র সব অভিব্যক্তির দ্বার উন্মোচন করে। ডিস্ট্রোফি নামক দুরারোগ্য রোগের যন্ত্রণার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সীবিত কোলাজকে একান্ত ব্যক্তিগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে কোলাজের ইতিহাসের বিচিত্র বুনটের সঙ্গে নিজের অনন্য পরিপ্রেক্ষিত বা পার্সপেক্টিভ এবং শৈলীর মিশ্রণে এই শিল্পে গভীরতর একটি পর্যায় যুক্ত করেন সুরঞ্জনা ভট্টাচার্য্য।

শিল্পীর পরিচয়

সুরঞ্জনা ভট্টাচার্য্যের জন্ম বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে এবং থাকেন তিনি ঢাকায় এবং মন্ট্রিয়লে। শিল্পী তাঁর সৃজনশীলতা এবং দৃঢ়তাকে যুথবদ্ধ করে দুই যুগব্যাপী দুর্ভাগ্যজনক ডিস্ট্রফির তীব্র ব্যথাকে সীবিত কোলাজে রূপান্তরিত করেন। কন্দিন্সকি এবং মাতিস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের সীবন-দক্ষতাকে ব্যবহার করেন তিনি একাধারে সৌন্দর্যসৃষ্টি এবং দুঃখ, একাকীত্ব ও ব্যথা জয়ের সংগ্রামের গল্প বলার কাজে। সুরঞ্জনা বলেন: ‘রঞ্জিত, রঙিন, চিত্রিত কাপড়ের একেকটি ফালি আমার কাছে জীবন্ত একেকটি সত্তা। তাদের প্রত্যেকের যেন নিজস্ব চেতনা আছে এবং সেগুলিই আমার নিজের গল্প বলায় আমাকে অনুপ্রাণিত করে।’ ব্যথা, শিল্প ও সীবনের এই অনন্য মিথস্ক্রিয়া পূর্ব এবং পশ্চিমের আর্টের প্রভাবে সৃষ্টি করে এক জীবন্ত ট্যাপেস্ট্রি, যেখানে প্রতিটি সুতা, প্রতিটি বস্ত্র-ফালি নিজের প্রাণপণ টিকে থাকার ‘গল্প বোনে’। সুরঞ্জনার শিল্পকর্ম সৃজনক্ষমতার স্বতঃপরিবর্তনশীল শক্তির এক অনন্য উদযাপন-উৎসব। গভীরভাবে মর্মস্পর্শী তাঁর একেকটি সীবিত কোলাজ আশা এবং বিপর্যয় অতিক্রমকালীন অতৃপ্ত, ব্যাথাতুর আত্মার প্রতিটি পর্যায়কে প্রতিফলিত করে। জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোকে অনুপ্রেরণামূলক গল্পে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে শিল্পচর্চার ভূমিকা রাখার এক অনন্য সাক্ষ্য হতে পারে সুরঞ্জনার সীবিত কোলাজ।

